The Secret in Their Eyes (2009)
(El secreto de sus ojos)
Director: Juan José Campanella
Country: Argentina
আইএমডিবি রেটিং- ৮.৩/১০
গত কয়েকদিন ২০১০ সালে অস্কার প্রতিযোগিতায় (৮২তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ড) বিদেশী ভাষার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া ৫টি মুভি দেখলাম। মুভিগুলো হলো আজামি (ইসরায়েল), দি হোয়াইট রিবন (জার্মানি), এ প্রফেট (ফ্রান্স), দি মিল্ক অব সরো (পেরু) এবং দি সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ (আর্জেন্টিনা)। প্রত্যেকটি মুভিই আমাকে মুগ্ধ করেছে। সবগুলো মুভি নিয়েই পরবর্তীতে ব্লগে লেখা দেওয়ার ইচ্ছা আছে । তবে আজ বলবো দি সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ এর কথা। অস্কারের দৌড়ে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন এ মুভিটিই পুরস্কার জিতে নিয়েছিলো। আর্জেন্টিনাই হচ্ছে ল্যাটিন আমেরিকার একমাত্র রাষ্ট্র যাদের থলিতে রয়েছে দু দু’টো অস্কার। এর আগে ১৯৮৫ সালে দি অফিসিয়াল স্টোরি (The Official Story) মুভিটি অস্কার জিতে নেয়।
মুভিটির জেনারে ক্রাইম/থ্রিলার/ ড্রামা/রোমান্স এসব কথা থাকলেও সব কিছু ছাপিয়ে দি সিক্রেট ইন দেয়ার আইজকে আমি বলবো আগাগোড়া একটি ভালোবাসার মুভি। আগেই বলে রাখি প্রচলিত কোন রোমান্টিক মুভির কাতারে দি সিক্রেট ইন দেয়ার আইজকে অন্তর্ভুক্ত করা যাবেনা। রোমান্টিক মুভি নির্মান করতে নর-নারীর আবেগের অত্যাধিক ছড়াছড়ি আর যৌনতার যে প্রয়োজন নেই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দি সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ।
বেঞ্জামিন একজন অবসরপ্রাপ্ত ফেডারেল জাস্টিস এজেন্ট। অবসর জীবন কাটাতে তিনি একটি উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। উপন্যাসের বিষয়বস্তু হিসেবে বেছে নেন ২৫ বছর আগের তার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। ২৫ বছর আগে কমবয়সী এক গৃহিণী ধর্ষিত ও খুন হওয়ার একটি তদন্তে তিনি, তার মদ্যপ বন্ধু পাবলো আর একজন এডভোকেট (উকিল) আইরিন জড়িয়ে পড়েছিলেন। তদন্তটি তারা সফলভাবে শেষ করে দোষীকে খুঁজে বের করতে পারলেও ক্ষমতাশীল মহলের চাপে খুনি এক বছরের মধ্যেই সাজামুক্তি পায়। খুনি বেঞ্জামিনকে হত্যা করার চেষ্টা চালায় কিন্তু নিহত হয় পাবলো। বেঞ্জামিন আত্মগোপন করে। সময়ের স্রোতে ২৫ বছর পর বেঞ্জামিন এ ঘটনাটি নিয়ে উপন্যাস লেখার জন্য সাহায্য চাইতে তার পুরাতন বান্ধবী আইরিনের কাছে যায়।
ফ্ল্যাশব্যাকের মাধ্যমে অতীত ঘটনাগুলো দর্শকদের সম্মুখে তুলে ধরা হয়। সে সঙ্গে চলে বেঞ্জামিনের উপন্যাস লেখার কাজ।
আইরিন ও বেঞ্জামিন পরস্পরকে ভালোবাসতো। আইরিন বেঞ্জামিনের চেয়ে বয়সে অনেক ছোট ও সামাজিক পদমর্যাদায় বড় হওয়ায় বেঞ্জামিন মুখ ফুটে কখনও কিছু বলেনি। আইরিন চাইতো বেঞ্জামিন সামাজিক সকল বাধা অতিক্রম করে তাকে নিয়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যাক। কিন্তু বাস্তববাদী বেঞ্জামিন কখনই সে চেষ্টা করেনি।
মুভিটির অসাধারন একটি অংশ পাবলো আর বেঞ্জামিনের বন্ধুত্ব। পাবলো চরিত্রটির স্থায়ীত্ব খুব বেশি না হলেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র। মূলত পাবলোর কারণেই পুলিশ খুনিকে ধরতে পারে। পাবলো মদ্যপ হয়ে টাকা-পয়সা নষ্ট করায় তার স্ত্রী তাকে ঘরে ঢুকতে দিতোনা। অনেক সময় অর্থাভাবে মদ খাওয়ার বিল পরিশোধ করতে না পারলে বেঞ্জামিন বিল দিয়ে দিতো। বেঞ্জামিনের বাসায় পাবলোকে বেঞ্জামিন ভেবে যখন খুনীরা তাকে হত্যা করে তখন পাবলো চাইলে বেঁচে যেতে পারতো।খুনিরা তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলো সে বেঞ্জামিন কিনা? পাবলো স্বীকার করেছিলো সেই বেঞ্জামিন এবং কৌশলে টেবিলের উপর রাখা বেঞ্জামিনের ছবি সংবলিত ফটোফ্রেম লুকিয়ে ফেলেছিলো।
মুভিটিতে পাবলোর একটি সংলাপ আমার বেশ ভালো লেগেছে-
A man can change his face, his home, his family, his wife or girlfriend, his religion , his GOD. But can’t chnge one thing….his PASSION
আরেকটি চরিত্রের কথা না বললে রিভিউটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। খুন হওয়া মেয়েটির স্বামী মোরেল। মোরেল প্রতিদিন অফিস শেষে রেল আর বাস স্টেশনে বসে থাকতো। হাজারো মানুষের ভিড়ে সে খুঁজে বেড়াতো তার প্রিয়তমা স্ত্রীর খুনিকে। খুনি ধরা পড়েও যখন ছাড়া পেয়ে যায় তখন মোরেল শহর থেকে দূরে নিভৃতে জীবন যাপন শুরু করে।
মুভির রোমান্টিসিজম ও মূল রহস্য উন্মোচনের ব্যাপারটা বলে দিলে আপনারা আর মুভিটা দেখে মজা পাবেননা। শুধু এটুকুই বলবো মোরেল শেষ পর্যন্ত তার ভালোবাসার এক দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে পেরেছিলো আর বেঞ্জামিন নিজের ভুল বুঝতে পেরে জানতে পেরেছিলো ভালোবাসার আসল মাহাত্ম্য কী? মুভিটির ফিনিশিং এক কথায় দুর্দান্ত।
আমি মুভি সাধারনত ডিভিডিতে দেখি। তবে এ মুভিটি আমার এক বন্ধু নেট থেকে ডাউনলোড করে দিয়েছিলো। নেটে সার্চ দিলেই প্রচুর লিংক পাবেন মুভিটির।
ধন্যবাদ
আমার মুভি বিষয়ক অন্যান্য পোস্ট
অস্কার পাওয়া দু'টি জার্মান ক্লাসিক মুভি
ক্রিস্তফ কিয়েসলোস্কির দি থ্রি কালার ট্রিলজি : ব্লু, হোয়াইট, রেড (The Colors: Blue , White, Red)
আমার প্রিয় সিনেমা: ব্যালাড অফ এ সোলজার
ক্লিন্ট ইস্টউডের দশটি ওয়েস্টার্ন মুভি